উত্তর কোরিয়ায় চলমান সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্পের শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। গতকাল রবিবার (২৬ এপ্রিল) রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম রডং সিনমুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। কিম জং উনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জল্পনার কোন অবসান এখনও হয়নি। গোটা বিশ্ব যখন কিম জং উনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ধোঁয়াশায়। অনেকে কিমের মৃত্যুর হয়েছে এমন খবরও প্রকাশ করছেন। তখন উত্তর কোরিয়ার এ সংবাদমাধ্যম এমন খবর প্রকাশ করল। তবে কিম জং উনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোন তথ্য জানায়নি তারা।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, পায়েকেতু পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত সেমজিয়ন শহরে দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন কিম জং উন। সেমজিয়ন শহরটিকে উত্তর কোরিয়ার ‘আদর্শ সমাজতান্ত্রিক শহর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ শহর কিম জং উনের বাবা কিম জং ইলের জন্মস্থান।
গত বছরের ডিসেম্বরে পায়েকেতু পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এ শহরটি পুননির্মাণের উদ্যোগ নেন কিম জং উন। নতুন রেলস্টেশন, বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে শুরু করে টেলিফোন সেবার আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে উন্নত আদর্শ শহর গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে কিমের । গত ডিসেম্বরে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং কিম জং উন।
এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার পত্রিকা ডেইলি এনকে অসমর্থিত সূত্রের বরাতে জানিয়েছিল– গত বছরের আগস্ট থেকেই কিম জং উন হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন, কিন্তু পায়েকতু পাহাড় থেকে ঘুরে আসার পর থেকে তার সেই সমস্যা আরও প্রকট হয়। এ সংবাদের পর ৩৬ বছর বয়েসি কিম জং উন হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর অসুস্থ হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন বলে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে।
উত্তর কোরিয়া সারাবিশ্বের সঙ্গে কার্যত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকায় তার অসুস্থতার খবরের সত্যতা যাচাই একরকম অসম্ভব। অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য জানতে তদন্ত শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি সূত্র জানায়, কিমের অসুস্থতার খবর সত্য নয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি কিমের অসুস্থতার খবরটি সত্য নয়’।
এদিকে শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, কিম জং উন জীবিত আছেন। শীঘ্রই তিনি জনসম্মুখে উপস্থিত হবেন। তবে তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোন তথ্য জানাতে রাজি হয়নি ওই সূত্র।
তবে এরইমধ্যে চীন থেকে একটি চিকিৎসক দল কিম জং উনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে কোরিয়ায় পৌঁছেছে। এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পর উত্তর কোরিয়ার এ নেতার স্বাস্থ্য নিয়ে ফের জল্পনা বাড়ে। জল্পনার পালে হাওয়া লাগে যখন চীন সমর্থিত হংকং স্যাটেলাইট টিভি (এইচকেএসটিভি) একজন উপপরিচালক শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে তার ১ কোটি ৫০ লাখ ফলোয়ারের উদ্দেশে জানান- ‘বিশ্বস্ত সূত্র’ থেকে তিনি কিম জং উনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।
কিম জং উনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জল্পনার মধ্যে ওয়াশিংটনের একটি নজরদারি দল শনিবার জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার ছোট একটি শহরের অবকাশ যাপন কেন্দ্রে কিম জং উনের ব্যক্তিগত ট্রেন চিহ্নিত করা হয়েছে। শনিবার ‘প্রজেক্ট ৩৮’ নামের ওই নজরদারি দলের স্যাটাইলাইটে তোলা ছবি প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের একটি ছোট শহরের অভিজাত এলাকায় কিম জং উনের ট্রেনটি দাঁড়িয়ে আছে।